বাত অথবা Arthritis হলো শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, প্রদাহ এবং কার্যক্ষমতার হ্রাসজনিত একটি রোগ। এটি মূলত হাড়ের সংযোগস্থলে সংক্রমণ বা অবক্ষয়জনিত কারণে হয়। সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাতের সমস্যা বৃদ্ধি পায়, তবে এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
বাত অথবা Arthritis এর ধরন:
বাত অথবা Arthritis বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, তবে প্রধান কয়েকটি হল:
অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)
- এটি সবচেয়ে সাধারণ বাতের ধরন।
- হাড়ের সংযোগস্থলে কার্টিলেজ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এটি হয়।
- সাধারণত হাঁটু, কোমর, ঘাড়, ও কাঁধে বেশি হয়।
- প্রধান লক্ষণ: ব্যথা, ফুলে যাওয়া, চলাচলে কষ্ট।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis)
- এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই জয়েন্টগুলিকে আক্রমণ করে।
- এটি শরীরের একাধিক জয়েন্টকে একসঙ্গে প্রভাবিত করতে পারে।
- হাতের আঙুল, কবজি, হাঁটু, এবং পায়ের জয়েন্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- প্রধান লক্ষণ: সকালে বেশি ব্যথা, জয়েন্টের শক্ত হয়ে যাওয়া, ক্লান্তি।
গাউট (Gout)
- এটি মূলত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে হয়।
- সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলের জয়েন্টে ব্যথা, লালচে রং এবং ফোলা দেখা যায়।
- প্রধান লক্ষণ: হঠাৎ তীব্র ব্যথা, জয়েন্টের লালচে ফোলা ভাব।
অ্যাঙ্কিলোসিং স্পনডিলাইটিস (Ankylosing Spondylitis)
- এটি মূলত মেরুদণ্ড ও কোমরের হাড়কে আক্রান্ত করে।
- এটি ধীরে ধীরে মেরুদণ্ডকে বাঁকা করে দিতে পারে।
- প্রধান লক্ষণ: কোমরে ব্যথা, মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে যাওয়া।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস (Psoriatic Arthritis)
- এটি মূলত সোরিয়াসিস (Psoriasis) রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- ত্বকের সাথে সাথে জয়েন্টেও প্রদাহ হয়।
- প্রধান লক্ষণ: চামড়ায় দাগ, নখের বিকৃতি, জয়েন্ট ব্যথা।
বাত অথবা Arthritis এর কারণ:
- বয়স বৃদ্ধির ফলে হাড়ের ক্ষয়।
- অতিরিক্ত ওজন যা হাঁটু ও কোমরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
- অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
- জিনগত কারণে বাত হতে পারে।
- অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমে গাউট হওয়া।
- শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যা।
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা হঠাৎ চোট লাগা।
বাত অথবা Arthritis এর লক্ষণ:
- জয়েন্টের ব্যথা ও ফোলা।
- হাড়ে শক্তভাব অনুভব হওয়া।
- চলাফেরায় অসুবিধা।
- গাঁটে লালচে ভাব ও উষ্ণতা।
- সকালের দিকে বেশি ব্যথা অনুভূত হওয়া।
বাত অথবা Arthritis এর আয়ুর্বেদিক প্রতিকার:
- হরিদ্রা – প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- গুগ্গুলু – বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকর।
- অশ্বগন্ধা – জয়েন্টের শক্তি বৃদ্ধি করে।
- মেথি বীজ – প্রদাহ কমিয়ে ব্যথা উপশম করে।
- ত্রিফলা চূর্ণ – হজমশক্তি বাড়িয়ে টক্সিন দূর করে।
খাদ্যাভ্যাস:
- বেশি পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি ও ফল খান।
- দুধ ও দইয়ের পরিবর্তে বাদামের দুধ নিতে পারেন।
- বেশি পরিমাণে জল পান করুন।
- ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে মাংস ও অতিরিক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলুন।
- আদা ও দারুচিনির মতো মসলা ব্যবহার করুন।
উপসংহার:
বাত একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি বাতের লক্ষণগুলি বাড়তে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
