কাঁধের জয়েন্ট ব্যথার সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক কারণে হতে পারে। এটি অল্প সময়ের জন্য হতে পারে, আবার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবেও দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নিই এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার।
কাঁধের জয়েন্ট ব্যথার কারণ
১. ফ্রোজেন শোল্ডার (Frozen Shoulder)
ফ্রোজেন শোল্ডার বা অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস হলে কাঁধের জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়।
- সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের বেশি হয়।
- ডায়াবেটিস বা দীর্ঘদিন হাত নাড়ানোর অনুপযুক্ততা এই রোগের কারণ হতে পারে।
২. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)
- এটি বয়সজনিত জয়েন্ট ক্ষয়ের কারণে হয়।
- হাড়ের কার্টিলেজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে জয়েন্টে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে ব্যথা ও শক্তভাবের কারণ হয়।
৩. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis)
- এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত জয়েন্টকে আক্রমণ করে।
- সাধারণত জয়েন্ট ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং সকালের দিকে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়।
৪. গাউট (Gout)
- শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমা হলে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।
- সাধারণত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে বেশি হয়, তবে বাহুর জয়েন্টেও হতে পারে।
৫. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস (Cervical Spondylosis)
- ঘাড়ের হাড়ের ক্ষয় বা ডিস্কের সমস্যা হলে বাহুতে ব্যথা ছড়াতে পারে।
- এটি সাধারণত ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ, ভুল পজিশনে বসা বা শোবার কারণে হয়।
৬. পেশির টান বা ইনজুরি
- অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভারী বস্তু তোলা বা ভুলভাবে হাত ব্যবহার করলে পেশির উপর চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
৭. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাব
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাব হাড়কে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে জয়েন্টে ব্যথা হয়।
৮. টেন্ডিনাইটিস ও বার্সাইটিস (Tendinitis & Bursitis)
- টেন্ডিনাইটিস হলে জয়েন্টের চারপাশের পেশির টেন্ডনে প্রদাহ হয়।
- বার্সাইটিস হলে জয়েন্টের লুব্রিকেশন স্যাক (bursa) ফুলে যায়, যা ব্যথা ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
কাঁধের জয়েন্ট ব্যথার লক্ষণ
- হাত উপরে তুলতে কষ্ট হওয়া।
- হাত বা কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া।
- জয়েন্টে ফোলা বা প্রদাহ দেখা দেওয়া।
- ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যা হওয়া।
- ব্যথার কারণে দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হওয়া।
- ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাওয়া।
প্রাকৃতিক ও আয়ুর্বেদিক সমাধান
১. গরম ও ঠান্ডা জলের সেঁক
- গরম জলের সেঁক জয়েন্টের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ঠান্ডা জলের সেঁক প্রদাহ কমায়।
২. যোগব্যায়াম ও হালকা স্ট্রেচিং
- ফ্রোজেন শোল্ডার, আর্থ্রাইটিস ও সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসজনিত ব্যথা কমাতে যোগব্যায়াম কার্যকর।
- প্রতিদিন হালকা স্ট্রেচিং করলে জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
৩. আয়ুর্বেদিক হার্বস
- অশ্বগন্ধা: জয়েন্টের ব্যথা ও প্রদাহ কমায়।
- শালকী (Boswellia): আর্থ্রাইটিসজনিত ব্যথা উপশমে সহায়ক।
- গোক্ষুর: জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- গিলয়: প্রদাহ ও অটোইমিউন সমস্যার সমাধানে উপকারী।
- হলুদ ও আদা: প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক।
৪. খাবারে পরিবর্তন
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খাওয়া যেমন: হলুদ, আদা, লবঙ্গ, এলাচ।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা।
- ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা।
৫. ম্যাসাজ ও তেল ব্যবহার
- সরষে তেল ও রসুনের ম্যাসাজ জয়েন্টের ব্যথা কমায়।
- নারকেল তেল ও ইউক্যালিপটাস অয়েল জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?
যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- ব্যথা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়।
- জয়েন্ট ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়।
- হাত নাড়াতে একদমই কষ্ট হয়।
- ব্যথার সঙ্গে জ্বর বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয়।
কাঁধের জয়েন্ট ব্যথা উপেক্ষা করা উচিত নয়। কারণ বুঝে সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাকৃতিক ও আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ব্যথা কমানো যায় এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আপনার কি কখনো এই ধরনের ব্যথা হয়েছে? নিচে কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!