ঘন ঘন প্রস্রাব চাপার (frequent urination) সমস্যা অনেকের জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। দিনের পর দিন এই সমস্যার সম্মুখীন হলে তা সাধারণ জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটায়। আসুন জেনে নেই এর কারণ, লক্ষণ এবং সমাধান।
ঘন ঘন প্রস্রাব চাপার কারণ:
মূত্রথলির সংক্রমণ (UTI)
- মূত্রথলিতে সংক্রমণ হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ হতে পারে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়।
- লক্ষণ: প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া, পেটের নিচের অংশে ব্যথা, প্রস্রাবের দুর্গন্ধ।
ডায়াবেটিস (Diabetes)
- টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস উভয় ক্ষেত্রেই শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করার জন্য ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।
- লক্ষণ: অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া।
প্রস্টেট গ্রন্থি সমস্যার কারণে (Prostate Problems) ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
- পুরুষদের ক্ষেত্রে, প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হলে এটি মূত্রনালীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং মূত্রথলিকে সম্পূর্ণ খালি হতে বাধা দেয়।
- লক্ষণ: প্রস্রাব ধীরে ধীরে হওয়া, মাঝরাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসতে পারে।
মূত্রনালীতে পাথর (Kidney Stones)
- মূত্রনালী বা মূত্রথলিতে পাথর থাকলে ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ হতে পারে।
- লক্ষণ: প্রস্রাবে ব্যথা, রক্তের উপস্থিতি।
অতিরিক্ত স্নায়বিক সংবেদনশীলতা (Overactive Bladder)
- মূত্রথলি অত্যন্ত সংবেদনশীল হলে এটি ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ তৈরি করতে পারে।
- লক্ষণ: হঠাৎ প্রস্রাবের তাগিদ অনুভব করা।
অতিরিক্ত জল পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাব চাপতে পারে
- খুব বেশি জল পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসতে পারে। যদিও এটি কোনো সমস্যা নয়, তবে অসুবিধার কারণ হতে পারে।
চাপ বা মানসিক উদ্বেগ (Stress or Anxiety) থেকেও ঘন ঘন প্রস্রাব চাপতে পারে
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মূত্রথলিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects of Medications) থেকেও ঘন ঘন প্রস্রাব চাপতে পারে
- ডায়ুরেটিকস (diuretics) বা অন্য কোনো ঔষধ প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব চাপলে করণীয়:
ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
খাবারের প্রতি সচেতনতা:
- মশলাদার ও প্রস্রাব বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
- অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম পান করুন।
ব্যায়াম:
- নিয়মিত যোগব্যায়াম বা কেগেল এক্সারসাইজ মূত্রথলির পেশি শক্তিশালী করে।
জল পান:
- জল পর্যাপ্ত পান করুন, তবে অতি জল পান করবেন না।
ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ:
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
- ডায়াবেটিস, প্রস্টেট বা কিডনির সমস্যার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
আয়ুর্বেদিক সমাধান
- গোখরু (Gokhru): মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- পুনর্নবা (Punarnava): মূত্রথলির কার্যকারিতা উন্নত করে।
- ধনিয়া বীজ: এক চামচ ধনিয়া বীজ জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জল সকালে খালি পেটে পান করুন।
- বার্লি জল: বার্লি সিদ্ধ করে সেই জল দিনে ২-৩ বার পান করুন। এটি প্রস্রাবের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- যদি প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়।
- প্রস্রাবে তীব্র জ্বালা বা ব্যথা অনুভূত হয়।
- ঘন ঘন প্রস্রাবের সঙ্গে তীব্র তৃষ্ণা, ক্লান্তি বা ওজন কমে যায়।
- প্রস্রাবের তাগিদ হলেও প্রস্রাব না হওয়া।
উপসংহার
ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যাটি অনেক সময় সাধারণ হতে পারে, আবার এটি বড় কোনো রোগের ইঙ্গিতও দিতে পারে। তাই উপসর্গ অবহেলা না করে যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক জীবনযাপন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর হতে পারে।
সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ুন।
এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুস্থ থাকার জন্য’ সাবস্ক্রাইব করুন।