হিমোগ্লোবিন আয়রন ভিটামিন B12 পার্থক্য:
শরীরের সুষ্ঠু কার্যকারিতার জন্য হিমোগ্লোবিন আয়রন ভিটামিন B12 অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদিও এদের কাজ ভিন্ন, এরা পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। আসুন এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
হিমোগ্লোবিন কী?
হিমোগ্লোবিন একটি প্রোটিন, যা আমাদের রক্তে লোহিত কণিকাগুলিতে (RBC) থাকে। এটি মূলত অক্সিজেন বহন করার কাজ করে। হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেওয়া এবং কোষ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ফুসফুসে ফেরত নিয়ে আসা।
গঠন:
- হিমোগ্লোবিন আয়রন এবং প্রোটিন মলিকিউল দিয়ে তৈরি।
স্বাভাবিক মাত্রা:
- পুরুষদের জন্য ১৩-১৭ g/dL এবং মহিলাদের জন্য ১২-১৫ g/dL।
অভাবের লক্ষণ:
হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়, যার ফলে শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দেয়:
- ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা।
- শ্বাসকষ্ট (বিশেষত শারীরিক পরিশ্রমের সময়)।
- মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা।
- ঠান্ডা অনুভব করা (বিশেষত হাত-পায়ে)।
- দ্রুত হার্টবিট।
- একাধিক ক্ষেত্রে পেশীর দুর্বলতা।
আয়রন কী?
আয়রন একটি খনিজ, যা হিমোগ্লোবিন তৈরি করার জন্য অপরিহার্য। এটি শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হতে পারে না, যার ফলে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
কাজ:
- হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য।
- শরীরে শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখা।
উৎস:
- মাংস, ডিম, শাকসবজি (পালং শাক, মেথি), বাদাম।
অভাবের লক্ষণ:
আয়রনের ঘাটতিতে শরীরে আয়রন-ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। এর লক্ষণ:
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি।
- ত্বক, নখ, এবং ঠোঁটের ফ্যাকাশেভাব।
- নখ ভঙ্গুর হওয়া।
- মুখের কোণে ফাটল বা ঘা হওয়া।
- অস্বাভাবিক ক্ষুধা।
- মাথাব্যথা এবং মনোযোগ কমে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট।
- ঠান্ডা সহ্য করতে অসুবিধা।
ভিটামিন B12 কী?
ভিটামিন B12 একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, যা রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্র সুরক্ষিত রাখে। এটি DNA এবং RNA গঠনে ভূমিকা রাখে।
কাজ:
- লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য।
- নার্ভের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি।
উৎস:
- প্রাণিজ খাবার (ডিম, দুধ, মাংস, মাছ)।
অভাবের লক্ষণ:
ভিটামিন B12-এর অভাব শরীরের রক্ত এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। লক্ষণগুলো হলো:
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা।
- ত্বক হলুদাভ হয়ে যাওয়া।
- হাত-পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি।
- পায়ে ভারসাম্যহীনতা।
- স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া বা একাগ্রতার অভাব।
- বিষণ্ণতা বা মেজাজ পরিবর্তন।
- জিভ ফোলা এবং লাল হওয়া।
- মুখে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি।
- ক্ষুধামন্দা।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
-
উপসংহার
হিমোগ্লোবিন, আয়রন, এবং ভিটামিন বি১২-এর সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এদের অভাব পূরণ করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে শরীরের হিমোগ্লোবিন ও ভিটামিনের মাত্রা নিশ্চিত করুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ুন।
এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুস্থ থাকার জন্য’ সাবস্ক্রাইব করুন।