কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা রক্তকে পরিশোধন করে এবং বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে অপসারণ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ এবং শারীরিক উপসর্গগুলি চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিচে কিডনি খারাপ হওয়ার প্রধান উপসর্গগুলি উল্লেখ করা হলো:
কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ :
প্রস্রাবের পরিবর্তন
- প্রস্রাবের রং ঘন হয়ে যাওয়া বা রক্ত মিশে যাওয়া।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বেশি হওয়া।
- প্রস্রাব ফেনা হওয়া (প্রোটিন লিকেজের কারণে)।
- প্রস্রাবে জ্বালাভাব বা ব্যথা।
- রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হওয়া।
শরীরের ফোলাভাব
- মুখ, হাত, পা বা গোড়ালিতে ফোলা।
- কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে অতিরিক্ত জল জমে, যা ফোলাভাবের কারণ হতে পারে।
অবসাদ এবং দুর্বলতা
- কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে টক্সিন জমে যায়, যা শরীরে ক্লান্তি, অবসাদ এবং দুর্বলতা তৈরি করে।
- কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে, যা আরও ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে
- কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
ত্বকের সমস্যা কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে
- ত্বকে শুষ্কতা এবং চুলকানি দেখা দিতে পারে।
- শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে গেলে ত্বকে জ্বালা বা ফুসকুড়ি হতে পারে।
বমি বমি ভাব এবং খাবারে অরুচি
- কিডনি টক্সিন দূর করতে ব্যর্থ হলে বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি এবং ওজন কমার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হওয়া কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে
- শরীরে অতিরিক্ত জল জমে ফুসফুসে চাপ তৈরি করতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হয়।
- কিডনি খারাপ হলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করে।
বুকে বা কোমরে ব্যথা
- কিডনির সংক্রমণ বা পাথর থাকলে কোমর, পিঠ বা বুকে ব্যথা হতে পারে।
মুখের ভিতরে বা শ্বাসে দুর্গন্ধ
- রক্তে ইউরিয়া জমলে মুখে ধাতব স্বাদ এবং শ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
কিডনি ভালো রাখতে কিছু পরামর্শ
পর্যাপ্ত জল পান করুন
- প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন।
- শরীর হাইড্রেট থাকলে কিডনি সহজেই বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করতে পারে।
- গ্রীষ্মকালে বা শারীরিক পরিশ্রমের পর আরও বেশি জল পান করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
- ফল, সবজি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান।
- অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার (যেমন লাল মাংস) নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।
- প্রসেসড খাবার, অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি এড়িয়ে চলুন।
- কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন
- ডায়াবেটিস কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
- নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন
- ধূমপান কিডনির রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
- অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত বা সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন।
- ব্যায়াম রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কিডনি ভালো রাখতে সহায়ক।
ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করুন
- কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
- ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
- রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত কিডনির অবস্থা পরীক্ষা করান।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কারণ অতিরিক্ত স্ট্রেস কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কারণ অতিরিক্ত ওজন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে।
- সময়মতো খাবার গ্রহণ করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করুন।
- দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
চিকিৎসকের কাছে যান যদি কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ থাকে
যদি কিডনি সমস্যার উপসর্গগুলির মধ্যে একাধিক লক্ষণ (যেমন প্রস্রাবে ফেনা, শরীর ফোলা, বা ক্লান্তি) দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সতর্কতা:
কিডনি রোগের উপসর্গ প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য মনে হতে পারে, তবে এটি উপেক্ষা করা ঠিক নয়। চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু হবে, ততই সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ুন।
এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুস্থ থাকার জন্য’ সাবস্ক্রাইব করুন।
Pingback: শরীর ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার: