You are currently viewing শরীর ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার
শরীর ফুলে যাওয়ার কারণগুলো জানুন এবং ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করে সুস্থ থাকুন।

শরীর ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যা, যা সাধারণত এডিমা নামে পরিচিত, একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যা। এটি একাধিক কারণে হতে পারে এবং প্রতিটি কারণের জন্য আলাদা প্রতিকার প্রয়োজন। আসুন এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

শরীর ফুলে যাওয়ার কারণ:

জলশূন্যতা বা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ:

  • শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে লবণ ও জলের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে শরীর জল ধরে রাখে। ফলে শরীর ফুলতে পারে।

হৃদরোগ:

  • হৃদযন্ত্র যদি ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে না পারে, তবে পায়ের নিচের অংশে জল জমে ফুলে যেতে পারে।

কিডনির সমস্যা:

  • কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের হতে পারে না, যা ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষণ এবং শারীরিক উপসর্গ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

লিভারের সমস্যা:

  • লিভার সঠিকভাবে প্রোটিন উৎপাদন করতে না পারলে রক্তনালী থেকে তরল বের হয়ে ত্বকের নিচে জমা হয়ে শরীর ফুলে যেতে পারে।

থাইরয়েড হরমোনের অভাব:

  • হাইপোথাইরয়েডিজম শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, এর ফলে শরীর ফুলে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থা:

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনগত পরিবর্তনের ফলে জল জমে ফুলে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটি কখনও কখনও প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নামক গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

আঘাত বা সংক্রমণ:

  • আঘাত বা স্থানীয় সংক্রমণের কারণে ত্বকের নিচে জল জমে ফুলে যেতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

  • কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ জল জমার কারণ হতে পারে।

শরীর ফুলে যাওয়ার প্রতিকার:

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যায় সাধারণ প্রতিকার:

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যা কমাতে লবণ কম খান লবণ কমানো:

  • প্রতিদিনের খাবারে লবণের পরিমাণ সীমিত করুন।

জল পান:

  • শরীরের জলশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত জল পান করুন। প্রতিদিন কত লিটার জল খাওয়া দরকার জানতে এখানে ক্লিক করুন।

পা উঁচু করে রাখা:

  • পা ফুলে যাওয়া কমাতে শোবার সময় পা উপরে তুলে রাখুন।

সক্রিয় থাকুন:

  • হালকা ব্যায়াম ও হাঁটা শরীরে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

শরীর ফুলে যাওয়ার ঘরোয়া প্রতিকার:

মেথি বীজ:

  • মেথি বীজ প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত জল বের করতে সাহায্য করে।
  • ব্যবহার: ১ চামচ মেথি বীজ এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করুন।

ধনেপাতা ও জিরার মিশ্রণ

  • ধনেপাতায় প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি থাকে যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে জিরা হজমে সহায়তা করে এবং শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
  • ব্যবহার: ১ চামচ জিরা ও কিছু ধনেপাতা ২ কাপ জলে সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন।

তরমুজ ও শসা

  • তরমুজ ও শসা উভয়ই উচ্চমাত্রার জল ধারণকারী ফল ও সবজি। এগুলি শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত লবণ ও জল দূর করতে সহায়তা করে। তরমুজে লাইকোপিন এবং শসায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ফোলাভাব কমায়।
  • ব্যবহার: তরমুজ ও শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করতে পারেন।

ঘোল

  • ঘোল হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। এতে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান জলধারণ কমাতে সহায়তা করে।
  • ব্যবহার: ১ গ্লাস ঘোলে সামান্য বিট লবণ এবং জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?

যদি শরীর ফোলাভাব (অ্যাডেমা) দীর্ঘসময় ধরে থাকে বা এর সঙ্গে কিছু গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমন কিছু পরিস্থিতি দেওয়া হলো যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

শরীর ফুলে যাওয়ার সঙ্গে গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে:

  • শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ লাগা।
  • পা, গোড়ালি বা হাতের ফোলাভাব ক্রমশ বাড়তে থাকলে।
  • ফোলাভাবের সঙ্গে তীব্র ব্যথা বা লালচে ভাব থাকলে।
  • মুখ বা চোখের চারপাশে ফোলাভাব।

দীর্ঘস্থায়ী ফোলাভাব:

  • যদি ১-২ সপ্তাহ ধরে ফোলাভাব না কমে।
  • ঘুম থেকে ওঠার পরও ফোলাভাব থেকে যায়।

অসুবিধাজনক শারীরিক পরিবর্তন হলে:

  • দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা প্রস্রাব করতে অসুবিধা।
  • বমি ভাব, মাথা ঘোরা, বা দুর্বলতা।

যদি কিছু শারীরিক অবস্থা থাকে:

  • উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে।
  • কিডনি, লিভার বা হার্টের সমস্যার ইতিহাস থাকলে।
  • প্রেগনেন্সির সময় যদি পা বা শরীরের অন্যান্য অংশে ফোলা দেখা দেয়।

অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে:

  • হঠাৎ করে ফোলাভাব শুরু হলে।
  • চুলকানি, র‍্যাশ বা গলা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে।

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যায় কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?

ফোলাভাব সাধারণত সাময়িক ও সহজে সমাধানযোগ্য সমস্যা হতে পারে। তবে এটি কখনো কখনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার (যেমন, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, বা থাইরয়েডের সমস্যা) লক্ষণ হতে পারে। এজন্য উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে যেন বিপদ না হয় তার জন্য একটি পরামর্শ:

নিজে থেকে ওষুধ বা ডায়েট পরিবর্তন না করে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলুন। জল জমে ফুলে যাওয়া অনেক সময় সামান্য কারণেও হতে পারে, তবে এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই সময়মতো সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণ করে সঠিক প্রতিকার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন এবং সুস্থ থাকুন।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ুন।

এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুস্থ থাকার জন্য’ সাবস্ক্রাইব করুন।

Leave a Reply