You are currently viewing ইউরিক এসিডের কারণ, লক্ষণ এবং কমানোর উপায়
ইউরিক এসিড বৃদ্ধি রোধে সচেতন হন! জানুন কারণ, লক্ষণ ও কার্যকর সমাধান।

ইউরিক এসিডের কারণ, লক্ষণ এবং কমানোর উপায়

ইউরিক এসিড কি?

ইউরিক এসিড হল শরীরের একধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা পিউরিন নামক যৌগ ভাঙার ফলে তৈরি হয়। পিউরিন মূলত আমাদের শরীরের কোষ এবং কিছু খাবারে পাওয়া যায়। যখন পিউরিন ভাঙে, তখন লিভার ইউরিক এসিড তৈরি করে এবং তা রক্তে প্রবাহিত হয়। পরবর্তীতে কিডনি এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

যখন শরীরে বেশি ইউরিক এসিড জমা হয় বা কিডনি ঠিকমতো এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে পারে না, তখন রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। একে হাইপারইউরিসেমিয়া বলে, যা গেঁটেবাত (গাউট), কিডনিতে পাথর বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ইউরিক এসিডের কারণ:

রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

1. পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া

পিউরিন একটি প্রাকৃতিক যৌগ যা বিভিন্ন খাবার এবং দেহের কোষে পাওয়া যায়। যখন আমরা পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবার খাই, তখন শরীরে এটি ভেঙে যায় এবং ইউরিক এসিড তৈরি করে।

প্রক্রিয়াটি এভাবে ঘটে:

পিউরিন ভাঙা:

  • শরীরের কোষ এবং লিভার পিউরিনকে ভেঙে হাইপোক্স্যান্থিন তৈরি করে।
  • হাইপোক্স্যান্থিন আরও ভেঙে জ্যান্থিন হয়।
  • শেষপর্যন্ত, জ্যান্থিন ভেঙে ইউরিক এসিডে পরিণত হয়।
  • এই প্রক্রিয়ায় লিভারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম, জ্যান্থিন অক্সিডেজ, কাজ করে।

ইউরিক এসিডের সঞ্চয়:

  • শরীরে তৈরি হওয়া ইউরিক এসিডের একটি অংশ রক্তে থেকে যায় এবং কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে এটি বের করে দেয়।
  • কিন্তু পিউরিনের পরিমাণ বেশি হলে, কিডনি সব ইউরিক এসিড ফিল্টার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে ইউরিক এসিড জমতে শুরু করে।

ইউরিক এসিডের সমস্যা:

  • অতিরিক্ত ইউরিক এসিড রক্তে জমে গেলে এটি গেঁটেবাত (gout) রোগের কারণ হতে পারে।
  • এছাড়া ইউরিক এসিড কিডনিতে স্ফটিক বা পাথর তৈরি করতে পারে।

পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ:

উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার:

  • লাল মাংস
  • লিভার, কিডনি, এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংস
  • সারডিন, টুনা, ম্যাকারেল, চিংড়ি
  • বিয়ার এবং অ্যালকোহল
  • মাশরুম, ডাল, পালংশাক

মাঝারি পিউরিনযুক্ত খাবার:

  • মুরগি, হাঁস
  • ফুলকপি, ব্রকলি

2. কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া।

  • কিডনি ইউরিক এসিডকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিডনি দুর্বল হলে এই নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়।

3. স্থূলতা এবং বেশি ওজন।

  • অতিরিক্ত ওজনের ফলে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা দিতে পারে, যা ইউরিক এসিড নিঃসরণকে বাধাগ্রস্ত করে।
  • ফ্যাট সেল বেশি থাকলে শরীর বেশি ইউরিক এসিড উৎপন্ন করে এবং কম পরিমাণে তা শরীর থেকে বের হয়।

4. অ্যালকোহল ও চিনি-সমৃদ্ধ পানীয়ের অতিরিক্ত সেবন।

  • অ্যালকোহল শরীরে পিউরিনের (Purine) পরিমাণ বাড়ায়, যা ইউরিক এসিডে রূপান্তরিত হয়।
  • ফ্রুক্টোজ-সমৃদ্ধ পানীয় (যেমন সফট ড্রিংক) লিভারের মেটাবলিজমের মাধ্যমে ইউরিক এসিড উৎপন্ন বাড়িয়ে দেয়।

5. জেনেটিক কারণ বা বংশগত প্রভাব।

  • কিছু মানুষ বংশগতভাবে ইউরিক এসিডের উচ্চ মাত্রা বজায় রাখার প্রবণতা নিয়ে জন্মায়।
  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গাউট বা হাইপারইউরিকেমিয়া থাকলে ইউরিক এসিডের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

6. দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস।

  • দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, যা শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
  • স্ট্রেস শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে এবং ইউরিক এসিড নিষ্কাশন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

ইউরিক এসিডের লক্ষণ:

ইউরিক এসিড বেশি হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

  • গেঁটেবাত বা জয়েন্টে তীব্র ব্যথা।
  • জয়েন্টে লালচে ভাব, ফোলা, এবং উত্তাপ অনুভূত হওয়া।
  • কিডনিতে পাথর।
  • প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।

ইউরিক এসিড কমানোর উপায়:

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন:

  • পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, লিভার, এবং সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন।
  • বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, এবং ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • চিনি ও প্রসেসড খাবার খাওয়া সীমিত করুন।

২. পর্যাপ্ত জল পান করুন:

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন। এটি কিডনিকে ইউরিক এসিড বের করতে সাহায্য করে।

৩. অ্যালকোহল এবং সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন:

  • বিশেষত বিয়ার এবং ফ্রুক্টোজ-সমৃদ্ধ পানীয়।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন:

  • অতিরিক্ত ওজন ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়, তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

৫. প্রাকৃতিক এবং আয়ুর্বেদিক সমাধান:

  • গিলয় রস এবং ত্রিফলা চূর্ণ ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • আদা এবং তুলসীর চা পান করলে প্রদাহ কমে।

৬. পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ:

  • রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিন।

উপসংহার:
ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অপরিহার্য। নিয়মিত পরীক্ষা এবং সঠিক চিকিৎসা ইউরিক এসিডের সমস্যাকে স্থায়ী সমাধান করতে পারে। আপনার স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে আজ থেকেই সচেতন হোন।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করে আমাদের অন্যান্য ব্লগ পড়ুন।

এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও দেখতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘সুস্থ থাকার জন্য’ সাবস্ক্রাইব করুন।

Leave a Reply